ইন্টারনেটে যেসব ওয়েবসাইটে মানুষ বেশি সময় ব্যয় করে


 


তথ্য প্রযুক্তির এই যুগে আমাদের প্রতিদিনের একটা বড় সময় ব্যয় হয় ইন্টারনেটে। আরও নির্দিষ্ট করে বললে বলা যায় কিছু নির্দিষ্ট ওয়েবসাইটেই কাটে আমাদের অনেকটা সময়। চলুন আজ জেনে নেই বিশ্বের সর্বাধিক জনপ্রিয় কিছু ওয়েবসাইটের কথা।

গুগল (Google)

পৃথিবীর সবচেয়ে জনপ্রিয় ওয়েবসাইট গুগল। ইন্টারনেটে বিদ্যমান যেকোন তথ্য, ছবি, গান ইত্যাদি খুঁজে পেতে আমরা সবাই আশ্রয় নেই গুগলের। গুগল শব্দটি এত বিখ্যাত যে “কোন কিছু খোঁজা”র প্রতিশব্দ হিসেবে “গুগল” শব্দটি ব্যবহৃত হচ্ছে। এর মাসিক ব্যবহারকারীর সংখ্যা হল ২৪৬ বিলিয়ন এবং ২০০৬-এর তথ্য অনুযায়ী এর বার্ষিক আয় হল ১.৬৫ বিলিয়ন ডলার। গুগল প্রতিষ্ঠার ধারণাটি ১৯৯৬ সালে প্রথম আসে যখন ল্যারী পেইজ তার পিএইচডি সহকর্মী সেরগেই ব্রিন এর সাথে সার্চ ইঞ্জিন-এর ফলাফল উৎকর্ষতার গবেষণার কাজ শুরু করেন।  

ইউটিউব (Youtube)

ভিডিও দেখতে কে না ভালবাসে? আর যদি এমন কোন প্ল্যাটফর্ম থাকে যেখানে মিলবে লক্ষ লক্ষ ভিডিও তাহলে তো কথাই নেই। আরো ভালো হয়, যদি যেখানে যোগ করা যায় নিজের ভিডিওটিও! আর এই সবকিছুর জন্য পৃথিবীর সবচেয়ে বড় প্ল্যাটফর্ম হল ইউটিউব। বর্তমানে এটি বিশ্বের ২য় জনপ্রিয় ওয়েবসাইট। এখন ইউটিউবে প্রতি ঘন্টায় সারা পৃথিবী থেকে ৩০০ ঘন্টার ভিডিও কন্টেন্ট প্রতি মিনিটে আপলোড করা হয় এবং প্রতিমাসে ১.৩ বিলিয়ন দর্শক ইউটিউব দেখে থাকেন।

ফেসবুক (fb)

বিশ্বের জনপ্রিয় ওয়েবসাইটের তালিকায় ফেসবুককে আমরা পাচ্ছি তৃতীয় হিসেবে। সোশ্যাল মিডিয়া সাম্রাজ্যের একচ্ছত্র অধিপতি এই ফেসবুক গত ১ যুগের অধিক থেকে নিজের সিংহাসন বজায় রেখেছে। ফেসবুকের প্রতিষ্ঠাতা মার্ক জুকারবার্গ বন্ধু এবং পরিবারের সদস্যদের সাথে যোগাযোগ করতে প্রথম ফেসবুক শুরু করেন। পরে সেটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কর্পোরেট, দেশ থেকে দেশান্তরে ছড়িয়ে পড়ে। বর্তমানে এর ব্যবহারকারীর সংখ্যা প্রতি মাসে ২.৪ বিলিয়নের চেয়েও বেশি।

বাইডু (baiDu)

বাইডু চীনের একটি প্রভাবশালী সার্চইঞ্জিন কোম্পানী যেটাকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের গুগলের সমকক্ষ  বলা যেতে পারে। গুগল এবং বাইডু’র মধ্যে উল্লেখযোগ্য তফাৎ হচ্ছে বাইডু চীন সরকারের সাথে পারষ্পরিকভাবে কাজ করে। বাইডুর অনেক ধরনের প্রোডাক্ট রয়েছে যেমন ম্যাপ, নিউজ, ভিডিও, এনসাইক্লোপিডিয়া, এন্টিভাইরাস এবং ইন্টারনেট টিভি। বাইডু পৃথিবীর ২য় বৃহত্তর সার্চইঞ্জিন যা কিনা চীনের ৭৫% মার্কেট শেয়ার দখল করে আছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বাইডু খুব একটা জনপ্রিয় না, কিন্তু এই সাইটটি গুগলের শক্ত প্রতিযোগী হতে পারে আগামীতে।


উইকিপিডিয়া (Wikipedia)

এই লিস্টের প্রথম নন-প্রফিট প্রতিষ্ঠান উইকিপিডিয়া বিশ্বের সমস্ত জনপ্রিয় ওয়েবসাইট থেকে ভিন্ন। প্রতিষ্ঠানটি ২০০১ সালে জিমি উইলস ও ল্যারী স্যাঙ্গার প্রতিষ্ঠা করেন। উইকিপিডিয়ার প্রথমদিকের নিবন্ধগুলি নুপিডিয়া, স্ল্যাসডট পোস্টিং এবং সার্চ ইঞ্জিন ইনডেক্সিং-এর মাধ্যমে তৈরি করা হয়। ২০০১ সালের মধ্যে উইকিপিডিয়ায় ১৮ ভাষার প্রায় ২০,০০০ নিবন্ধ তৈরি করা হয়। এটি বিশ্বের সর্বাধিক রেফারেন্স প্রদানকারী সাইট হিসেবে বিশেষভাবে পরিচিত। ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত হিসেব মতে মাসে প্রায় ৩৭৪ মিলিয়ন ইউনিক ব্যবহারকারী উইকিপিডিয়া ব্যবহার করে। এই ওয়েবসাইটটির রয়েছে প্রায় ৭২,০০০ সক্রিয় স্বেচ্ছাসেবক যারা কিনা কাজ করছে ৪৮ মিলিয়ন নিবন্ধ নিয়ে। একটি প্রতিবেদনে উঠে এসেছে উইকিপিডিয়ার তথ্য ৯৯.৭% সঠিক পাঠ্য বইয়ের তুলনায়।

কিউকিউ (Tencent QQ)

প্রযুক্তিতে চীনের অপ্রতিরোধ্য গতির প্রভাব সারা ওয়েব দুনিয়ায় বিরাজ করছে। এরই ফলশ্রুতিতে চীনের একাধিক ওয়েবসাইট আজ টপলিস্টে রয়েছে। কিউকিউ ডট কম তার মধ্যে একটি যা কিনা ডেভলপ করছে চীনের টেক জায়ান্ট টেন্সেন্ট। মূলত কিউকিউ একটি ইন্সট্যান্ট মেসেজিং সাইট যার মাধ্যমে চ্যাটিং এর পাশাপাশি গেম খেলা, গান শোনা, শপিং করা, মুভি দেখাসহ নানা ধরনের ফিচার ব্যবহার করতে পারবেন। ২১০ মিলিয়ন ব্যবহারকারী একই সঙ্গে ম্যাসেজিংয়ে সক্রিয় রাখার মাধ্যমে কিউকিউ গিনিস বুকে ওয়ার্ল্ড রেকর্ড করেছিলো। তাদের নিজস্ব কারেন্সি রয়েছে যা দ্বারা ব্যবহারকারীরা গেইমের বিভিন্ন ফিচার আনলক করার পাশাপাশি শপিং করতে পারেন। বর্তমানে এই সাইটটির ৮৬০ মিলিয়ন ব্যবহারকারী এই সাইটটিকে বিশ্বের ৬ষ্ঠ জনপ্রিয় সাইটে রূপান্তরিত করেছে।


টি-মল ( T-Mall)

আলিবাবা পরিবারের আরেক সদস্য টি মল ডট কম এশিয়ার সর্ববৃহৎ বিজনেস টু কাস্টোমার (B2C) রিটেল প্ল্যাটফর্ম। জ্যাক মা এর হাতেই ২০০৮ সালে তাওবাও এর সহপ্রতিষ্ঠান হিসেবে আবির্ভাব ঘটে টি মলের। প্রতিষ্ঠার ঠিক পরপরই প্রতিষ্ঠানটি চীনের সব বড় ব্র্যান্ডের সাথে অফিসিয়াল অনলাইন পার্টনার হিসেবে চুক্তিবদ্ধ হয়। ২০১৪ সালে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ডও টি মলের সাথে ব্যবসা স্থাপনে আগ্রহ প্রকাশ করে। ফলে খুব দ্রুত সময়ের মধ্যেই ওয়েবসাইটটি ব্র্যান্ড অনুসন্ধানী ভোক্তাদের বিশ্বাস অর্জনে সফল হয়। এই ওয়েবসাইটটিতে প্রতি মাসে গড়ে প্রায় ২৭৭ মিলিয়ন ইউনিক ভিজিটর ভিজিট করেন যা কিনা এই সাইটটিকে এলেক্সা র‍্যংকিংয়ে ৭ম অবস্থানে নিয়ে এসেছে।

তাওবাও (Taobao)

পশ্চিমা বিশ্বে তাওবাও নামটি হয়ত খুব একটি পরিচিত নয় কিন্তু এই ওয়েবসাইটটিকে ব্যপক অর্থে চায়নার ই-বে (E-Bay) হিসেবে বিবচনা করা হয়। তাওবাও প্রতিষ্ঠা করেন জ্যাক মা যিনি কিনা আগে থেকেই বিখ্যাত তার মেগা অনলাইন গ্লোবাল সোর্সিং সাইট আলি-বাবা’র জন্য। প্রতি মাসে প্রায় ৬৩৪ মিলিয়ন ভোক্তা (যা কিনা চীনের মোট জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেক) তাদের স্মার্টফোনের মাধ্যমে তাওবাও সাইট ভিজিট করে থাকেন। তাওবাও এর মূল আকর্ষন এখানে একজন গ্রামের কৃষক থেকে শুরু করে কোন সৌখিন ব্যক্তি সবার জন্য প্রয়োজনীয় সব রয়েছে।

 ইয়াহু (Yahoo)

এক সময়ের সর্বাধিক জনপ্রিয় সার্চইঞ্জিন ইয়াহু বর্তমানে গুগলের প্রকৃত প্রতিযোগী। ১৯৯৪ সালে স্টানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই বন্ধু জেরি ইয়াং এবং লেরি ফিলা ইয়াহু প্রতিষ্ঠা করে যারা কিনা ইলেক্ট্রিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ছাত্র ছিলেন। ২০১৫ সালের হিসাব অনুযায়ী ইয়াহুতে কর্মরত ছিলেন সর্বমোট ১১,৪০০ কর্মী এবং তাদের নিট আয় ছিলো ৭.৫২ বিলিয়ন। ২০১৬ সালে ভ্যারাইজন  মিডিয়া নামের একটি কোম্পানী ইয়াহু’কে ৪.৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে কিনে নেয়। ইয়াহুর দাবি ইয়াহুর নিয়মিত ব্যবহারকারীর সংখ্যা প্রায় ৭০০ মিলিয়ন এবং প্রতি মাসে প্রায় ৫কোটি মানুষ ৩০টির বেশি ভাষায় ইয়াহু ব্যবহার করে।

অ্যামাজন (Amazon)

আমাজন একটি ইন্টারনেট ভিত্তিক মার্কেটপ্লেস ওয়েবসাইট যা কিনা ১৯৯৪ সালে জেফ বেজোস নামের একজন মার্কিন উদ্যোক্তা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। এটি বিশ্বের সবচেয়ে বড় ই-কমার্স সাইট এবং আয়ের দিক থেকেও এটি বিশ্বের সর্ববৃহৎ ইন্টারনেট কোম্পানী।  আমাজন অনলাইন বইয়ের দোকান হিসাবে কার্যক্রম শুরু করলেও পরবর্তিতে সেখানে লাখেরও অধিক পন্য যুক্ত করা হয়। ২০১৬ সালে তারা ইংলিশ এর পাশাপাশি ওয়েবসাইটির আরও ৩টি ভাষার সংস্করন ইন্টারনেট দুনিয়ায় অবমুক্ত করে।  জেনে অবাক হবে বর্তমানে আমাজনের ৩১০ মিলিয়ন সক্রিয় কাস্টোমার রয়েছে যারা বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আমাজন ব্যবহার করছে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন