গুগল ফটোস কী ও কিভাবে ব্যবহার করবো?







স্মার্টফোনের সহজলভ্যতা আমাদের স্মৃতিকে সংরক্ষণ করা সহজ করে দিয়েছে। যাদের হাতে স্মার্টফোন আছে, তারা যে কোন ভাললাগার মুহূর্ত পেলেই, সেই মুহূর্তের ফটো তুলে রাখেন। এমনকি, কোন ভাল স্থানে বেড়াতে গেলেও সেই স্থানের ছবি তুলে রাখেন। এমনও মানুষ আছেন যারা তাদের স্মার্টফোনে প্রতিদিন শতাধিক ফটো তুলে থাকেন। কিন্তু এত ছবি সংরক্ষণ করা নিয়ে সবাই কম-বেশি চিন্তায় থাকেন। তাদের চিন্তা দূর করতেই গুগল ফটোজ নিয়ে এসেছে গুগল লিমিটেড লায়াবিলিটি কোম্পানী বা গুগল এলএলসি।


স্মার্টফোনের সহজলভ্যতা আমাদের স্মৃতিকে সংরক্ষণ করা সহজ করে দিয়েছে। যাদের হাতে স্মার্টফোন আছে, তারা যে কোন ভাললাগার মুহূর্ত পেলেই, সেই মুহূর্তের ফটো তুলে রাখেন। এমনকি, কোন ভাল স্থানে বেড়াতে গেলেও সেই স্থানের ছবি তুলে রাখেন। এমনও মানুষ আছেন যারা তাদের স্মার্টফোনে প্রতিদিন শতাধিক ফটো তুলে থাকেন। কিন্তু এত ছবি সংরক্ষণ করা নিয়ে সবাই কম-বেশি চিন্তায় থাকেন। তাদের চিন্তা দূর করতেই গুগল ফটোজ নিয়ে এসেছে গুগল লিমিটেড লায়াবিলিটি কোম্পানী বা গুগল এলএলসি।


গুগল ফটোজ কি?


গুগল ফটোজ হচ্ছে গুগল এলএলসি’র একটি ফটো শেয়ারিং এবং ফটো স্টোরিং সার্ভিস যা সবার জন্যেই উন্মুক্ত। ২০১৫ সালের মে মাসে গুগল তাদের এই সার্ভিসটি লঞ্চ করে এবং এটিকে তাদের সোশ্যাল নেটওয়ার্ক গুগল প্লাস থেকে আলাদা করে নিয়ে আসে।


লঞ্চ করার প্রথম ৫ মাসের মধ্যেই ১০ কোটি গুগল ইউজার গুগল ফটোজ ব্যবহার করতে শুরু করে। এক বছরের মাথায় এটি ২০ কোটি ছাড়িয়ে যায়। আর ২০১৭ সালের মে মাসে গুগল ফটোজের ইউজার দাঁড়ায় ৫০ কোটি। বর্তমানে এর ইউজার সংখ্যা প্রায় ২০০ কোটি।


এক জরিপের ফলাফল থেকে জানা যায় যে, বর্তমানে গুগল ফটোজে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে প্রতিদিন ১০২ কোটি ছবি স্টোর করা হয়। আর প্রতিদিনের ছবির সাইজ দাঁড়াচ্ছে ১৩.৭ পেটাবাইটস্ যেখানে ২০১৭ সাল পর্যন্ত টোটাল ইন্টারনেট আর্কাইভের সাইজ হচ্ছে ৪০ পেটাবাইটস্।


গুগল ফটোজের সুবিধা


যে কোন গুগল ইউজারদের জন্যে, বিশেষ করে যাদের একটি গুগল বা জিমেল অ্যাকাউন্ট রয়েছে, তাদের জন্যে গুগল ফটোজ সম্পূর্ণ ফ্রি। একজন ইউজার এখানে যতখুশি তত ফটো স্টোর করে রাখতে পারবেন, কোনও লিমিটেশন নেই। সেই সাথে, ভিডিও ফাইলও স্টোর করতে পারবেন। তবে, ফটো হবে সর্বোচ্চ ১৬ মেগাফিক্সেল আর ভিডিও হবে সর্বোচ্চ ১০৮০পি রেজ্যুলেশনের।




গুগল ফটোজ কিভাবে কাজ করে


গুগল ফটোজ মূলত একটি অনলাইন টুল। আর এই টুলটি গুগল ক্লাউড সার্ভারের সঙ্গে ইন্টিগ্রেড করা। যখনই কোন ইউজার গুগল ফটোজে কোন ফটো আপলোড করে, তখনই এই টুলটি ফটোটিকে ক্লাউড সার্ভারে পাঠিয়ে দেয় এবং সার্ভার সেটিকে সংরক্ষণ করে ফেলে।


আর ইউজারের অ্যাকাউন্টের সঙ্গে ক্লাউড সার্ভারের একটি অটোমেটিক লিংক তৈরি হয়। যারফলে, ইউজার তার অ্যাকাউন্ট থেকেই ছবিগুলোকে ম্যানেজ, এডিট এবং শেয়ার করতে পারে। আপনি চাইলে স্টোর করার আগেই অনলাইন ফটো এডিটিং টুল ব্যবহার করে এডিট কিংবা রিসাইজ করে নিতে পারেন।


গুগল ফটোজ অটোমেটিকভাবে ফটো অ্যানালাইজ করে এবং সাবজেক্ট ও নানা রকম ভিজ্যুয়াল ফিচার আইডেনটিফাই করতে পারে। আর এটা একজন ইউজারকে তার আপলোড করা হাজারো ফটো থেকে যে কোন নির্দিষ্ট্য ফটো সার্চ দিয়ে খুঁজে নেয়ার ক্ষেত্রে দারুণভাবে সাহায্য করে।


এমনকি, ইউজার ছবির নাম ছাড়াও আরো ৩টি ক্যাটেগরি দিয়ে সার্চ করতে পারে। ক্যাটেগরিগুলো হল মানুষ, স্থান এবং বস্তু। গুগল ফটোজে আর্টফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স যুক্ত করা হয়েছে। আর এই এআই ফটো থেকে মানুষের চেহারা চিনে রাখতে পারে এবং লোকেশনও মনে রাখতে পারে।


গুগল ফটোজে যুক্ত করা আর্টফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স মানুষ, পশু-পাখি, জীব-জন্তু, বিল্ডিং, খাবারসহ নানা রকম ক্যাটেগরিতে ফটোগুলোকে ভাগ করে নিতে পারে। সেই সাথে, এটি ক্যাটেগরি অনুযায়ী ফটো অ্যালবাম ক্রিয়েট করতে পারে। এ সবকিছুই মূলত ইউজারকে সর্বোচ্চ সুবিধা দেয়ার জন্যে করা হয়ে থাকে।


ফলশ্রুতিতে, একজন ইউজার তার যে কোন ডিভাইস (স্মার্টফোন, কম্পিউটার, ট্যাবলেট) থেকে ফটোগুলোর অ্যাক্সেস নিতে পারে। ইচ্ছে মতো এডিট এবং অর্গানাইজ করতে পারে। আর রয়েছে সিকিউরিটি সার্ভিসও, ফলে ইউজারের ছবি বা ভিডিও সম্পূর্ণ নিরাপদ থাকে।


গুগল ফটোজের স্টোরেজ


গুগল ফটোজের দুই রকম স্টোরেজ সুবিধা রয়েছে। একটা হচ্ছে, হাই-কোয়ালিটি আর অন্যটি হচ্ছে অরিজিনাল কোয়ালিটি। হাই-কোয়ালিটিতে আনলিমিটেড স্টোরেজ সুবিধা রয়েছে যেখানে আপনি যে রেজ্যুলেশনের ছবি বা ভিডিও আপলোড করবেন, গুগল সেখান থেকে ছবিগুলোকে ১৬ মেগাপিক্সেল এবং ভিডিওগুলোকে ১০৮০পিতে রি-সাইজ করে অ্যার্কাইভ করে নেবে। আর অরিজিনাল কোয়ালিটির ক্ষেত্রে আপনার ছবি বা ভিডিও যেমন ছিল তেমনই থাকবে।


অর্থাৎ, আপনি যে সাইজেই আপলোড করুন না কেন, সে সাইজ ও সে রেজ্যুলেশনই থাকবে। তবে, এক্ষেত্রে আপনার জন্যে স্টোরেজ লিমিটেশন রয়েছে। আপনার গুগল অ্যাকাউন্টে যে পরিমাণ স্টোরেজ সুবিধা রয়েছে, আপনি কেবল সেটুকুই ইউজ করতে পারবেন। যখন আপনার জন্যে নির্ধারিত স্টোরেজ শেষ হয়ে যাবে, তখন আপনাকে বাড়তি স্টোরেজ কিনে নিতে হবে।


সুতরাং, সাইজ এবং রেজ্যুলেশনের ব্যাপারটা গুগলের উপর ছেড়ে দেয়াই ভাল। অর্থাৎ, প্রথম স্টোরেজ সুবিধা বা হাই-কোয়ালিটি ব্যবহার করাই ভাল। যেখানে গুগল ফটোজ তার নিজের মতো করে রি-সাইজ বা রিডিউস করে নেবে, সমস্যা নেই। তাছাড়া, ফটোর ক্ষেত্রে ১৬ মেগাপিক্সেল কিন্তু অনেক এবং ভিডিওর ক্ষেত্রে ১০৮০পি যথেষ্ট্য। আরেকটা বিষয় হচ্ছে, গুগল কিন্তু রিডুউস কিংবা রিসাইজ করলেও আপনার ভিডিও কিংবা ফটোর কোয়ালিটি কিন্তু লেস হবে না। যার কারণে, এই অপশনটির নাম দেয়া হয়েছে হাই-কোয়ালিটি।

কেন গুগল ফটোজ ব্যবহার করবেন?


আপনার কম্পিউটার বা স্মার্টফোনে যতই স্পেস থাকুক না কেন, এক সময় না এক সময় আপনি স্টোরেজ সংকটে পড়বেনই। কারণ, আপনার লম্বা জীবনটিতে আপনি অসংখ্য ছবি তুলবেন এবং ভিডিও ক্যাপচার করবেন। আর এগুলোর যে সাইজ হবে, সেটা আপনার কম্পিউটার কিংবা স্মার্টফোন ধারণ করতে পারবে না। কাজেই, মোবাইল বা কম্পিউটারের স্পেস সংকট থেকে বাঁচার জন্যে আপনার অবশ্যই গুগল ফটোজ ব্যবহার করা উচিৎ।


আপনি কখনো নিশ্চয়তা দিতে পারবেন যে, আপনার কম্পিউটার কিংবা স্মার্টফোন নষ্ট হয়ে যাবে না? বিশেষ করে, কম্পিউটারের হার্ড ড্রাইভ কখনো ধ্বংশ হবে না? না, এ নিশ্চয়তা আপনি দিতে পারবেন না। কিন্তু গুগল আপনাকে এ নিশ্চয়তা দিচ্ছে যে, আপনার ফোন কিংবা কম্পিউটার ধ্বংশ হয়ে গেলেও আপনি আপনার মেমোরি অর্থাৎ আপনার স্মৃতিময় ছবিগুলো কখনো হারাবেন না। শুধু যে গুগল অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে আপনি আপনার ছবি ও ভিডিও স্টোর করে রাখবেন, সেই অ্যাকাউন্টের অ্যাক্সেস থাকলেই পৃথিবীর যে কোনও প্রান্ত থেকে, যে কোন ডিভাইসের মাধ্যমে আপনি আপনার সকল ছবি ও ভিডিও আবার ফিরে পাবেন।


একবার ভাবুন তো এ যাবৎ আপনি কতগুলো ছবি তুলেছেন! কখনো কি মনে করতে পারবেন, কত জায়গায় গিয়েছিলেন আর কত মানুষের সাথে ছবি তুলেছেন! অর্থাৎ, আপনার তোলা সমস্ত ছবিগুলোকে যদি আপনি ডেট, স্থান, প্রোগ্রাম অনুযায়ী অর্গানাইজ করে রাখতে চান, তবে আপনার কয়েক দিন লেগে যাবে। আর গুগল ফটোজ এ কাজটিকে মুহূর্তেই করে দিতে পারে।


গুগল ফটোজ আপনাকে এই সুবিধা দিচ্ছে যে আপনি চাইলে আপনার স্টোর করা ছবিগুলো গুগল ড্রাইভে ট্রান্সফার করতে পারবেন। সেই সাথে, যে কোন সময় আপনি আপনার কোন বন্ধু বা আত্মীয় স্বজনের সঙ্গে ফটোগুলো শেয়ার করতে পারবেন। ধরুণ, আপনাদের একটি পারিবারিক উৎসব অনুষ্ঠিত হয়ে গেছে যেখানে আপনার পরিবারের কিছু সদস্য অ্যামেরিকায় থাকার কারণে অংশ নিতে পারে নাই। কিন্তু তারা দেখতে চাইছে, অনুষ্ঠানটি কেমন হয়েছে, আপনারা কতটা মজা করেছেন।


কি করবেন? একটা একটা করে তাদেরকে ছবিগুলো পাঠাতে থাকবেন? ভিডিও ইমেল করবেন? কি পরিমাণ সময় লাগবে ভেবেছেন? এত কিছু না করে, সিম্পলি গুগল ফটোজের লিংকটা শেয়ার করে দিন। ওখান থেকেই তারা একযোগে সব ছবি এবং ভিডিও দেখে নিতে পারবে। দারুণ না!


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন