ইন্টারনেট কি ?ইন্টারনেটের সুবিধা ও অসুবিধা

 


আমরা প্রতিমুহূর্তে ইন্টারনেটের সঙ্গে যুক্ত থাকি, এক কথায় বলতে পারি ইন্টারনেট ছাড়া আমরা এক মুহূর্ত সময় কাটাতে পারবো না। যখনই প্রয়োজন হয় কোন তথ্য বা বিনোদন কে দেখি আর তখনই আমরা ঘুরে ফিরে চলে আসি ইন্টারনেটের কাছে। কিন্তু কখনো কি নিজেকে প্রশ্ন করে দেখেছেন যে ইন্টারনেট কি ?


এ কথা যদি কখনো আপনার কাছে কেউ জানতে চাই তবে হয়তো অনায়াসে আপনি তার উত্তর দিতে না পারলেও বিষয়টিকে নিজে বুঝতে পারেন কিন্তু গুছিয়ে বলতে পারেন না।


কিন্তু যদি আপনি আজ এই আর্টিকেলটি শেষ পর্যন্ত ধৈর্য সহকারে পড়েন তবে ইন্টারনেট সম্পর্কে সঠিক ধারণা ও বিস্তারিত জ্ঞান আপনার মধ্যে তৈরি হবে।

একথা আমরা খুব সহজেই অনুভব করতে পারি যে ইন্টারনেট ধারণাটি তখনই এসেছে যখন থেকে কোনো তথ্য অর্থাৎ ডাটা কে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে পাঠানোর মতো বিষয় মাথায় এসেছে। অর্থাৎ আমি বলতে চাইছি কম্পিউটার, ল্যাপটপ বা মোবাইলের মত কোন ডাটা বহনকারী যন্ত্রের কথা।

আমরা যখন কোন ফটো বা ভিডিও কে কম্পিউটার থেকে মোবাইলে নেওয়ার চেষ্টা করি তখন একটি ডাটা ক্যাবলের মাধ্যমে কম্পিউটারের সঙ্গে মোবাইলটিকে সংযুক্ত করতে হয় তারপর সেই ডাটা কে ডাটা ক্যাবলের মাধ্যমে আমরা মোবাইলে নিতে পারি।

ঠিক একই রকমভাবে বিজ্ঞানীরা একটি কম্পিউটারের বিভিন্ন ডাটাকে অন্য কম্পিউটারে ব্যাবহার করতে চাইল। কিন্তু বিষয়টি খুব সহজ ছিল না তাই বড় মাপের ডাটা কেবল দিয়ে দুটো কম্পিউটারকে এড করে দেওয়া হল এর ফলে খুব সহজেই একটি কম্পিউটারের ডাটা অন্য কম্পিউটার থেকে ব্যবহার করার সুবিধা লাভ করা গেল।



এরকমভাবে পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে কম্পিউটার পর্যন্ত কোন ডাটা বা তথ্যকে নিতে গেলে আমাদের বিশাল লম্বা মাপের ডাটা কেবিল কে যুক্ত করে তা করতে হবে।



এই বিষয়টি যত ভাবতে সহজ বাস্তবে তা করাটা খুবই কষ্টসাধ্য ব্যাপার। কিন্তু বর্তমানে যে ইন্টারনেট ব্যবস্থা চালু আছে তাকে এই ভাবেই তৈরি করা হয়েছে অর্থাৎ বিশ্বের সমস্ত দেশের সঙ্গে অন্যান্য দেশগুলির ডাটা কেবিল বা বিশাল বড় মাপের তার দিয়ে যুক্ত করা হয়েছে।


এর ফলে এক দেশের তথ্যকে অন্য দেশ থেকে খুব সহজেই ব্যবহার করা ও দেখা সুবিধাজনক হয়েছে।


যেমন এখানে একটা উদাহরন দিয়ে বিষয়টি বোঝানো যেতে পারে -

ধরুন আপনি এখন শিকাগো ইউনিভার্সিটি বা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইট খুলে সেখান থেকে বিভিন্ন ধরনের তথ্য জানতে চান। এর জন্য আপনাকে প্রথমে যে কোন ওয়েব ব্রাউজার এ গিয়ে লিখতে হবে শিকাগো ইউনিভার্সিটি।
কিন্তু বিষয়টি হলো শিকাগো ইউনিভার্সিটি তো আপনার দেশে অবস্থিত নয় অর্থাৎ শিকাগো ইউনিভার্সিটি বিষয়টির যে সমস্ত তথ্য তা সকলি আমেরিকা তে অবস্থিত সুতরাং আমাদের দেশ থেকে তাকে আমরা কোনোভাবেই দেখতে পারবোনা।

এই কারণে শিকাগো বা আমেরিকার থেকে একটি বিশাল মাপের ডাটা ক্যাবল আমাদের দেশের সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে যে ডেটা ক্যাবলের মাধ্যমে আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের যতগুলি তথ্য বা যত বৃহত্তর ডাটা আছে তাকে আমাদের দেশের ডাটা সেন্টারের সঙ্গে যুক্ত করা আছে।

এর ফলে যখনই আমরা কোন ব্রাউজার এ গিয়ে সার্চ করব শিকাগো ইউনিভার্সিটি তখন ওই ওয়েব ব্রাউজার টি শিকাগো ইউনিভার্সিটি কোন দেশে আছে সেই দেশে তথ্যকে খোঁজার জন্য যাবে এবং সেখান থেকে সেই তথ্য কে নিয়ে আমাদের সামনে তুলে ধরবে।

ভাবুন যদি আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আমাদের দেশের এই যোগাযোগটি না থাকতো তবে আমরা কি কোন ভাবে ওই দেশের কোন তথ্য আমাদের দেশ থেকে দেখতে পেতাম ?

আর এইভাবে পৃথিবীর সমস্ত দেশ গুলিকে বিশাল আকারের ডাটা কেবিল দিয়ে যুক্ত করা আছে যার ফলে অনায়াসে আমরা অন্য দেশের তথ্য কে বা সমস্ত পৃথিবীর তথ্যকে নিজের দেশে বসেই দেখতে পারি বা তাকে ব্যবহার করতে পারি।

এই যে সমস্ত পৃথিবী জুড়ে ডাটা ক্যাবল কে সাজিয়ে প্রত্যেকটি দেশের সঙ্গে প্রত্যেকটি দেশের যুক্ত করা হয়েছে এটা পৃথিবীকে একটা জালের মতো ঘিরে রেখে আছে তাই একে আমরা ইন্টারনেট বলি। প্রাথমিকভাবে ইন্টারনেটকে অদৃশ্য বলে মনে হলেও তা দৃশ্যমান একথা মনে রাখতে হবে। আর পৃথিবীজুড়ে সকল দেশগুলিকে যে সকল ডাটা ক্যাবল দিয়ে যুক্ত করা আছে তা অধিকাংশ সমুদ্রের মধ্যে দিয়ে বিছিয়ে দেওয়া তাই সহজে সেগুলি আমাদের চোখে পড়ে না।


ভারতবর্ষে ইন্টারনেট ব্যবস্থা -


পৃথিবীর যেকোন দেশে অন্য দেশ থেকে যেসকল (Satellite-Cable) গুলি আনা হয় তাকে ভারতের সকল জায়গাতে জুড়ে দেওয়া হয় না। নির্দিষ্ট কিছু শহরে ঐ সকল ডাটা কেবিল গুলিকে প্রাথমিক ভাবে যুক্ত করা হয়। 


অন্যান্য দেশ থেকে যে সকল ডাটা ক্যাবল গুলি আমাদের দেশে এসে পৌঁছায় তার নাম হল ডাটা সেন্টার। ভারতবর্ষে ডেটা সেন্টার গুলি মূলত তিনটি শহরে অবস্থিত - মুম্বাই, চেন্নাই ও কলকাতা।
ডাটা সেন্টারে বাইরে থেকে আসা ডাটা ক্যাবল গুলিকে যুক্ত করা থাকে। ডাটা সেন্টার থেকে অপেক্ষাকৃত কিন্তু উন্নত মানের ডাটা কেবিল দিয়ে ভারতবর্ষের সমস্ত প্রান্তকে যুক্ত করা হয়েছে এবং এই ডেটাকে বিভিন্ন টেলিকম সংস্থা মোবাইল টাওয়ার থেকে মোবাইল ও কম্পিউটার পর্যন্ত পরিষেবা দিয়ে থাকে।
তবে মনে রাখতে হবে যে এই সকল ডাটা সেন্টার গুলি শুধু বিভিন্ন দেশের তথ্যকে আমাদের দেশে নিয়ে আসে না আমাদের দেশের বিভিন্ন তথ্যকে অন্য দেশের সঙ্গে যুক্ত করে রাখে এর ফলে তারা আমাদের দেশের বিভিন্ন তথ্য কেউ খুব সহজেই হাতের কাছে পেয়ে যায়।


বাংলাদেশে ইন্টারনেট ব্যবস্থা -


ভারতবর্ষের তুলনায় অপেক্ষাকৃত ছোট দেশ বাংলাদেশ তাই যেখানে ভারতবর্ষে ডাটাকে সংগ্রহ করা ও ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য তিনটি ডাটা সেন্টার তৈরি করা হয়েছে সেখানে বাংলাদেশে একটি ডাটা সেন্টার তৈরি করা হয়েছে।
আমি উপরে বলেছি যে ডাটা ক্যাবল গুলোকে সাধারণত সমুদ্রের মধ্যে দিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে তাই সমুদ্রতীরবর্তী বড় শহরগুলিতে ডাটা সেন্টার তৈরি করা হয়। এই কারণে বাংলাদেশের সমুদ্র তীরবর্তী শহর বন্দর চট্টগ্রামে ইন্টারনেটের ডাটা সেন্টার তৈরি করা হয়েছে।
এই চট্টগ্রাম বন্দর ডাটা সেন্টার থেকে বিভিন্ন মাপের ক্যাবল দ্বারা সমস্ত বাংলাদেশের মধ্যে টাওয়ার সিস্টেমের মাধ্যমে ইন্টারনেট পরিষেবা দেওয়া হয়ে থাকে। আর এজন্য বিভিন্ন মোবাইল কোম্পানিগুলি বিশেষ ভূমিকা গ্রহণ করে থাকে যেমন - বাংলালিংক, গ্রামীণফোন ইত্যাদি।


ইন্টারনেটের সুবিধা -






ইন্টারনেট কি এবং বিভিন্ন দেশে ইন্টারনেট কিভাবে কাজ করে তা নিয়ে আমরা বিস্তারিত আলোচনা করেছি যদি আপনি তা না করে থাকেন তবে উপরে তা দেওয়া আছে পড়ে নিতে পারেন। এবার এখানে আমরা ইন্টারনেটের বিভিন্ন সুবিধা গুলি নিয়ে আলোচনা করব -



 

  • ইন্টারনেটের মাধ্যমে সমস্ত দুনিয়াকে এক জায়গাতে জুড়ে ফেলা সম্ভব হয়েছে যার জন্য আমরা খুব সহজেই এক জায়গায় বসে সমস্ত পৃথিবী কে বুঝতে পারি।

  • একটু ভেবে দেখুন যদি ইন্টারনেট না থাকত তবে আমরা কয়েকশো বছর পেছনে চলে যেতাম। অনেক পুরানো ঘটনা বা বড় বড় ঘটনাগুলিকে গবেষণা করতে সাহায্য করে ইন্টারনেট।
  • পৃথিবীর যেকোন তথ্যকে বাড়িতে বসেই ইন্টারনেটের মাধ্যমে আমরা দেখতে পারি।
  • আমাদের ইচ্ছা অনুসারে যেকোন বিষয় ইন্টারনেটে খুঁজলে তাকে আমরা হাতের কাছে পেয়ে যাই এবং তাকে নিজের মতো করে ব্যবহার করতে পারি শুধুমাত্র ইন্টারনেটের দৌলতে।
  • বর্তমান দিনে দাঁড়িয়ে ইন্টারনেটের জন্য সুবিধা হয়েছে ছাত্র-ছাত্রীদের কারণ তারা খুব কম পরিমাণ পরিশ্রম করে যেকোনো বিষয়কে ইন্টারনেটের মাধ্যমে খুঁজে আরো সহজতর করে ফেলে।

  • একটু মনে করুন যখন ইন্টারনেট ছিল না তখন অন্য কোন দেশের বা দূরে ঘটা কোন বিষয়কে আমরা সঙ্গে সঙ্গে জানতে বা দেখতে পারতাম না সুতরাং এই সকল ঘটনাগুলি এখন খুব সহজেই আমাদের হাতের মুঠোয় ধরা দিয়েছে।
  • ইন্টারনেটের সুবিধা কি তা আমরা হয়তো এই দশকের মানুষ যারা করোনা কে মোকাবেলা করেছে তারা সব থেকে বেশি অনুভব করে থাকবে। যে মুহূর্তে করোনা মহামারী ছড়িয়ে ছিল তখন পৃথিবীর সমস্ত কাজ যেন ইন্টারনেটের মাধ্যমেই সমাধান হয়েছে।

  • ইন্টারনেটের মাধ্যমে অনেক বড় বড় প্রজেক্ট এর কাজগুলো সহজ হয়ে উঠেছে।
  • ইন্টারনেট ব্যবহারের জন্য আমরা খুব সহজেই নতুন নতুন তথ্য পড়তে পারি ও তার সম্পর্কে জানতে পারি।
  • আমাদের জীবনের অন্যতম একটি লক্ষ্য হলো টাকা ইনকাম করা বর্তমানে ইন্টারনেট ব্যবস্থা এত সহজ হওয়ার ফলে ইন্টারনেটের মাধ্যমে আমরা টাকা ইনকাম করতে পারি।
  • ইন্টারনেটকে ব্যবহার করে খুব সহজে নিজের প্রতিভাকে হাজার হাজার মানুষের সামনে অল্প সময়ের মধ্যেই জনপ্রিয় হয়ে ওঠা যায়। একথা বর্তমান বিশ্বের মানুষেরা সবথেকে ভালো বুঝতে পারে কারণ টিক টক, ভিগো ভিডিও ইত্যাদি ব্যবহারের ফলে অনেক ছেলে মেয়েরা জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।

  • আজ ইন্টারনেট আমাদের শতশত কঠিন কাজ কে এক মুহুর্তে সহজ করে দিয়েছে। যেমন বর্তমান দিনের অনলাইনে কেনাকাটা।
  • ইন্টারনেট ব্যবহারের ফলে শিক্ষা ক্ষেত্রে বিপুল পরিবর্তন এসেছে যেমন বর্তমানে অনলাইনে কোচিং বা পড়াশোনা করার প্রবণতা বেড়েছে।
  • ইন্টারনেট এর কারণে চিকিৎসা ব্যবস্থায় বিপুল পরিবর্তন এসেছে খুব সহজে আমরা বাড়ি বসে চিকিৎসকদের সঙ্গে ভিডিও কলিং এর মাধ্যমেও কথাবার্তা বলতে পারি


অসুবিধা -

বন্ধুরা এই বিষয়টি বিজ্ঞানী নিউটনের অভিকর্ষ বলের মত। আমার একথা বলার কারণ হলো যেমন প্রত্যেকটি ক্রিয়ার সমান ও বিপরীতমুখী একটি ক্রিয়া থাকে ঠিক একই রকমভাবে বিশ্বের যে কোন বস্তুর দুটি দিক থাকে একটি ভালো অন্যটি খারাপ। ঠিক একই রকমভাবে ইন্টারনেটের কিছু খারাপ দিক আছে এবং সেগুলি আমাদের ব্যবহারের উপর নির্ভর করে যেমন -


  • ইন্টারনেট আমাদের ধীরে ধীরে জরাগ্রস্ত করে ফেলে সুতরাং আমরা বাইরের বিশ্ব তাকে হাতের মুঠোয় আনতে গিয়ে নিজেকে হারিয়ে ফেলি।


 

  • অতিরিক্ত ইন্টারনেট ব্যবহারের ফলে শরীরের ক্ষতি সৃষ্টি হয় এবং তা থেকে বিভিন্ন রকম বড় রোগের আশঙ্কা থাকে।
  • ইন্টারনেট কেমন শিক্ষাক্ষেত্রে বিপুল পরিবর্তন এনেছে ঠিক একই রকমভাবে শিক্ষার্থীদের কিছুটা বিপথে পরিচালিত করে ফেলেছে।
  • যেহেতু ইন্টারনেট এমন একটি মাধ্যম যাকে কেন্দ্র করে বর্তমান পৃথিবীর সমস্ত ঘটনা সংঘটিত হয় তাই প্রতিমুহূর্তে ইন্টারনেটে এমন ধরনের ফাঁদ পাতা থাকে যেখানে পা ফেলেই খুব সহজেই আমরা বড় আশঙ্কায় পড়তে পারি।
  • ইন্টারনেটে নিজের কোনো তথ্য দিলে তা থেকেই অনেক বড় বিপদের আশঙ্কা থাকতে পারে।


বন্ধুরা যদিও ইন্টারনেট আমাদের সুবিধা প্রদান করার জন্যই পৃথিবীতে সৃষ্টি হয়েছিল কিন্তু কিছু মানুষের খারাপ উদ্দেশ্য এর জন্য তার কিছু খারাপ ফলাফল আজ দেখা দিয়েছে। তবুও প্রতিমুহূর্তে আমাদের সচেতন ভাবে ইন্টারনেট কে ব্যবহার করা প্রয়োজন।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন